image
Spread the love

-আহমদ রাজু

মিলন কুমারের বহু কাঙ্ক্ষিত চাওয়াটাই বুঝি সত্যি হলো। আজ সে মনিহার সিনেমা হলে প্রথম পা রাখবে! বহু মিনিট-বহু ঘন্টা সর্বোপরি বহুদিন সে অপেক্ষায় ছিল এই দিনটার। জীবনে খুব বেশি শখ নেই তার; অন্তত নিজেকে নিয়ে। টানাটানির সংসারে সখ থাকতে নেই তা সে ভাল করেই জানে। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে সখতো একটা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। হয়তো এমন সখ অনেকেরই আছে- ছিল। যাদের ছিল তারা কেউ কেউ ইতিমধ্যে পূরণ করেছে, আর যাদের আছে তারা যথাসময়ে পূরণও করবে। মিলন কুমারের শখ এমন আহমরি কিছু নয়, যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মনিহার সিনেমা হলে একটা সিনেমা দেখা। কী আর এমন সখ! সেই ছেলেবেলায় টানাটানির সংসারে বাবাকে সাহায্য করতে পরের সেলুনে কাজ নিয়েছিল। কাজ শিখে একসময় নিজেই সেলুনের মালিক হয়েছে সত্যি তবে দারিদ্রতা আর অর্থনৈতিক সংকট তার পিছু ছাড়েনি আজো। তবে সবচেয়ে বড় কথা, সবার সখ থাকতে নেই; মিলন কুমার-রাই তার বড় প্রমাণ।

এক চালা টিনের চালের ওপর বাংলালিংকের সাইনবোর্ড। নিচের দিকে ছোট করে লেখা “মিলন হেয়ার কার্টিং সেলুন”। সেলুনের সাথে বাংলালিংকের বিশেষ কী সম্পর্ক তা জানা না গেলেও এদের কল্যাণে যে সেলুনটার নাম সবাই জানতে পারছে এটাই বড় কথা। বাংলালিংকের অতি উৎসাহের কারণে সেলুনের নামটা সুন্দর থেকে সুন্দরতর হয়ে উঠেছে। মিলন কুমার নিজে টাকা খরচ করে কখনো সেলুনের সাইনবোর্ড টাঙাবে বলে মনে হয় না। আর তার কী-ই বা দরকার সাইনবোর্ডের? “মিলনের সেলুন” সেতো এক নামে চেনা।
এবার ঈদে সেলুনে খুব ভীড় ছিল। এর অবশ্য বিশেষ কারণও আছে। একেতো রোজার ঈদ- তার ওপর গ্রীষ্মকাল। সারা মাসটা একদম যাচ্ছেতাই। সেলুনের নূন্যতম খরচটাও উঠাতে কষ্ট হয়। সেসব ক্লান্তি আর হতাশা এই কয়দিনে দূর হয়ে গেছে। সবাই কমবেশি চুল-দাড়ি কাটিয়েছে। আয় যা হয়েছে তা বেশ। তবে সেই টাকা যে তৈয়েব আলীকে দিয়ে দিতে হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। না হলে তাকে আর দেখে কে। তৈয়েব আলী মিলন কুমারের কাছে অনেক টাকা পাবে এখনও। তার কাছ থেকে সুদ নিয়েইতো এই ঘরের জামানত দিয়েছিল। সে আরো দশ বছর আগের কথা। নিয়েছিল দশ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে কিছু কিছু দিলেও ঈদে কাজ করে সিংহভাগ টাকা তাকেই দিয়ে দিতে হয়। এখনও নাকি ত্রিশ হাজার সাতশত আশি টাকা পাওনা! মিলন যতই শোধ করে দিতে চায় ততই দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে টাকার পরিমাণ। সে জানে না এর শেষ কোথায়।
তৈয়েব আলীকে পনের হাজার টাকা দিয়ে যা ছিল তা দিয়ে বাড়ির নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যদি কিনে হাত একেবারে শূন্য মিলন কুমারের। তবে আজ সে মনিহার সিনেমা হলে যাবেই। কাছে টাকা না থাকলেও মন তার ফুরফুরে। সে আগে থেকেই জানতো ঈদের আয় তার ভাগ্যে জুটবে না। তাইতো সে মাঝে মধ্যে এক টাকা বাঁচিয়ে ক্রিমের কৌটার ভেতরে রেখে দিত। সেটা খুলে গুনে দেখে ছিয়াত্তর টাকা জমা হয়েছে। সেই টাকা নিয়ে যখন যশোরের উদ্দেশ্যে বসুন্দিয়া থেকে বাসে উঠে তখন বিকাল চারটা।
লাল রঙের প্যান্ট, কচি কলাপাতা রঙের শার্ট, পায়ে প্লাষ্টিকের জুতা, চোখে কালো চশমায় এক অন্যরকম দেখায় মিলন কুমারকে। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে নাপিতের কাজ করে। নিজেকে ক্ষণেক অবুঝ মনের নায়ক ভাবতে শুরু করে। ঘুম আসে ঘুম ভাঙে; এভাবেই কখন যে যশোরে এসে পৌঁছায় তা সে বুঝতেই পারে না। চলতি শো ভাঙতে আরো বেশ কিছু সময় বাকী। এখনই সিনেমা হলের সামনে লোকে লোকারন্য; তীল ধারণের জায়গা নেই। সবাই সিনেমা দেখতে এসেছে! সারাদিন তাহলে কত লোক আসে? নিজের মনের কাছে প্রশ্ন করে মিলন কুমার। তার মাসির ছেলে প্রল্লদ বলেছিল, টিকিট প্রথমে না কাটলে পরবর্তীতে না পাবার সম্ভবনা বেশি। তাইতো সে ভীড় ঠেলে টিকিট কাউন্টারের দিকে যাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে। একপ্রকার যুদ্ধ করে যখন কাউন্টারের কাছে পৌঁছায় তখন সে ঘেমে নেয়ে একাকার। টাকা হাতে ছিদ্র দিয়ে হাত ঢুকিয়েও বিপদ। হাতে টিকিট পেলেও হাত বার করতে তাকে বেশ বেগ পেতে হয়। তিনজনের তিনটি হাত এক সাথে ছিদ্রটির ভেতরে ঢোকানো যে! এখানে অনেক সময় ভীড়ের ভেতর ব্লেড দিয়ে হাতে পোচ দেয় দুষ্টু লোকেরা। সে টিকিটসহ হাত বের করে যখন একটু ফাঁকা জায়গায় আসে তখন সে অনুভব করে সোনার হরিণের। যে সে সোনার হরিণ হাতে পেয়েছে। ভীড়ের মাঝে খুব বেশি ঘোরাফেরা করতে না পারলেও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে তার খারাপ লাগে না। দু’টাকার বাদাম কিনে খেতে খেতে হলের সামনে টাঙানো বড় কাপড়ে আঁকা অবুঝ মন সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে সে। মন তার পুলকিত হয়, হৃদয়ে শিহরণ জাগে। যদিও তার শরীর ঘামে নেয়ে একাকার। মাঘের শেষ। শীত এখনও শেষ হয়ে যায়নি। অথচ এই সিনেমা হলের সামনের মানুষগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে চৈত্রের মাঝ দুপুরে তারা রিলিফের চালের জন্যে অপেক্ষা করছে। ভীড়ের স্রোত এত যে, দুর্বল চিত্তের মানুষেরা সিনেমা দেখার জন্যে টিকিট কাটাতো দূরের কথা, কাউন্টার পর্যন্ত পৌছাতে পারবে না। কেউ কেউ টিকিট না কাটতে পেরে মনে দুঃখ নিয়ে দু’চারদিন ফিরেও গেছে বাড়িতে। এখানেই মিলন কুমার সফল যা এক বাক্যে স্বীকার করবে সবাই।
শো শেষ হলে মিলন কুমার ভেতরে ভেতরে উত্তেজিত-পুলকিত; আন্দোলিত তার হৃদয়। সে লাইন ধরে হলের ভেতের প্রবেশ করে একদম সামনের সারিতে বয়স্ক লাইট ম্যানের দেখানো সিটে যেয়ে বসে। যাকে বলা হয় থার্ড ক্লাস। এখানকার টিকিট অবশ্য সে ইচ্ছা করেই কিনেছে। কাছ থেকে রাজ্জাক-শাবানাকে দেখবে সে। আগেই জেনে এসেছিল দূর-আর কাছের পার্থক্য। কোন ক্লাসের টিকিটের কেমন দাম, আর কোন ক্লাস কোন জায়গায় বসতে দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
সিনেমা শেষে হলে আলো জ্বলে ওঠে। চারিদিক একেবারে ফকফকা। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকায়। সবকিছু ঝাপসা দেখে। সিনেমা চলাকালীণ সময়ে সে অবিরাম চোখের জল ফেলেছে, শাবানার কষ্টে- রাজ্জাকের হতাশায়। হাতের তালু দিয়ে চোখে জমে থাকা পানি মুছে পরিষ্কার করার চেষ্টা করে। শাবানার কথা ভেবে তার তখনও কান্না পায়; কাঁদতে পারে না। পাছে সবাই কী না কী ভাবে। তবে ভেতরে ভেতরে তার হৃদয়ে যে ক্ষরণ শুরু হয়েছে তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছে। এর আগে কখনও এমন হয়নি। কোন কারণে কারো ব্যথায় ব্যথিত হয়নি তার হৃদয়। আজ এই সিনেমা দেখার সময় মনে হয়েছে সে ঘটনাস্থলেই উপস্থিত আছে।
সবার শেষে হল থেকে বের হয় মিলন কুমার। অবশ্য এটা ইচ্ছা করেই করেছে। জীবনে হয়তো আর কোনদিন আসা হবে না। যে কারণে হলের ভেতরের সবকিছু দেখে নেয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। বিশেষ করে মনিহার সিনেমা হলের ভেতরের নান্দনিকতা তাকে প্রচণ্ড মুগ্ধ করে। সে কল্পনাও করেনি মনিহারের ভেতরে এমন মুগ্ধকর পরিবেশ। হাতের ঘড়িটার দিকে চোখ রাখে। রাত ন’টা বেজে পঞ্চাশ মিনিট! সে হঠাৎ বাড়ি ফেরার তাগিদ অনুভব করে। তাইতো হলের বারান্দা থেকে বের হয়ে সামনের রাস্তার দিকে এগিয়ে যায়। এই রাস্তা দিয়েই বসুন্দিয়া ফিরতে হয়। এখানে দাঁড়িয়ে থাকলেই কোন না কোন বাসগাড়ি পাওয়া যাবেই।
অনেকক্ষণ পরে একটা বাস আসতে দেখে তাতে উঠে পড়ে মিলন কুমার। উঠেই সিট পেয়ে তাতে বসে পড়ে সে। একটু পরেই ঘুমে চোখ বুজে আসে। বাসের সুপারভাইজার ভাড়া চাইলে সে ঘুমের ঘোরেই পকেট থেকে অবশিষ্ট বিশ টাকার নোটটা বের করে তার হাতে দিয়ে আবারো চোখ বোজে। পথের ক্লান্তিতে সে গভীর ঘুমে হারিয়ে যায়।

মনিরামপুর, মনিরামপুর, মনিরামপুর নামেন। শব্দটা কানে যেতেই তড়িৎ ঘুম উবে যায় তার। সে ধড়ফড়িয়ে ওঠে। “ইডা কোন জাগা?” প্রশ্ন করে মিলন কুমার।
পাশে বসে থাকা মাঝবয়সী লোকটি বলল, “মনিরামপুর বাজার।”
“কী কন!” বিস্ময়ে হতবাক মিলন কুমার। সে দ্রুত সিট থেকে উঠে গেটের কাছে যায়। লোকটার কথা বিশ্বাস না হওয়ায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির সুপারভাইজারকে প্রশ্ন করে, “ইডা কোন জাগা?”
সুপারভাইজার সরল উত্তর দেয়, “মনিরামপুর। তুমি কনে নামবা?”
মিলন কুমার বলে, “আমিতো বসুন্দিয়া মোড়ে যাবো।” তার কণ্ঠস্বর আওড়িয়ে আসে।
“তা এ গাড়িতি উঠলে কেন?”
মিলন কুমার কী উত্তর দেবে তা বুঝতে পারে না। সুপারভাইজার বলল, “এই জাগায় নামো। অন্য গাড়ি রাজারহাট যায়ে তারপর ওখান থেকে বসুন্দিয়ার গাড়ি সারা রাত পাবা। ঢাকার সব গাড়ি রাজারহাট থামে।”
মিলন কুমারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে গাড়িটি চোখের আড়ালে হারিয়ে যায়।
কি এক সমস্যার কারণে বিকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল বলে মনিরামপুর বাজারের অধিকাংশ দোকান আগেভাগেই বন্ধ হয়ে গেছে। দু’একটা খাবারের হোটেল আর ঔষুধের দোকান খোলা দেখতে পায় মিলন কুমার। বাস স্ট্যাণ্ডের খনেক দূরে একটি চায়ের দোকানের দিকে চোখ যায়। এগিয়ে যায় সেদিকে। দোকানী আপন মনে চায়ের কাপ পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। সে ছাড়া কেউ নেই সেখানে। অবশ্য ভেতরের একেবারে শেষ মাথায় উঁচু চৌকির ওপর রাখা টিভিটা চলছে আপন মনে। দোকানী সেদিকে দু’একবার চোখ দিলেও মন দিয়ে দেখছে না এটা নিশ্চিত। মিলন কুমারকে দেখে বলল, “তুমার কী চাই, চা কিন্তু হবে নানে।”
মিলন কুমার কাচুমাচু করে বলল, “আমার চা লাগবে না।”
“তালি কি চায়?”
“কিছু না।”
মিলন কুমারকে দেখে মনে সন্দেহ হয় লোকটির। বলল, “বাড়ি কনে তুমার?”
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অজানা শঙ্কায় ততক্ষণে মন তার ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। হঠাৎ কেমন যেন তার বাকশক্তি হারিয়ে গেছে। তবুও সে দোকানীর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলল, “বসুন্দিয়ায়।”
শুকনো কাপড় দিয়ে চায়ের কাপ মুছে ট্রের ওপর উপুড় করে সাজিয়ে রাখতে রাখতে বলল, “এহানে কনে আইছো?”
চোখ ছল ছল করে ওঠে মিলন কুমারের। সে চোখ মুখতে মুছতে বলল, “ভুল করে বাসে উঠে মনিরামপুরি চলে আইছি।”
মিলন কুমারকে কথা শেষ করতে না দিয়ে লোকটি বলল, “কান্দো না; এটটা ব্যবস্থা হবে। শেষ টিপটা এহনও আসেনি। কোন কারণে হয়তো দেরি হচ্ছে। রাস্তায় কোন জাগায় টায়ের বাস্টো ফাস্টো হয়ে গেছে; না হলি এত দেরি কোনদিন তো হয়নি। হয়তো তুমারে নিবার জন্যি দেরি করে আসতেছে।”
কথাটা শুনে কিছুটা প্রাণশক্তি ফিরে পায় মিলন কুমার। তবে কাছে যে কোন টাকা-পয়সা নেই সেটা ভেবে মনটা আবারো খারাপ হয়ে যায়।
“কিছু তো খাওনি মনে হচ্ছে। এই নেও, এখানে বসে খাও।” বলে দোকানের সামনে টাঙিয়ে রাখা প্যাকেট থেকে একটা রুটি আর কাধি থেকে দু’টিা কলা টান মেরে ছিঁড়ে মিলন কুমারের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
অচেনা জায়গা। আশে পাশে কেউ নেই। সে যেচে খেতে দিচ্ছে! লোকটির কোন খারাপ উদ্দেশ্য আছে ভেবে বলল, “না থাক লাগবে না। আমার খিদে লাগিনি।”
“আমি বুঝতি পারিছি। কাছে কোন পয়সা নেই তাইতো?”
সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে মিলন কুমার।
“পয়সা লাগবে না। আমার তরফতে তুমারে দিলাম; খাও।”
ভয়ে ভয়ে হাতে নেয় সে। তার মনে শত ভাবনার উদয় হয়। লোকটার খারাপ উদ্দেশ্য কী-ইবা থাকতে পারে? কাছে টাকা-পয়সা, মালামাল কিচ্ছু নেই। তবে কী মেরে ফেলবে? কেন মারবে? মেরে তার কী লাভ? তবে দেখে লোকটিকে খারাপ বলে মনে হচ্ছে না। মাঝ বয়সি লোকটার, খোচা খোচা দাড়ি। শীর্ণকায় চেহারা। ছ’ফুট উচ্চতার লোকটির শ্যামলা বর্ণ গায়ের রঙ। কপালে নামাজ পড়ার স্পষ্ট দাগ। তখনও মাথায় তার টুপি রয়েছে। হয়তো এষার নামাজ পড়ে টুপি খুলে রাখতে ভুলে গেছে কিংবা সারাক্ষণ টুপি মাথায় দিয়ে রাখে। এমন লোককে খারাপ ভাবার কোন মানেই হয়না ভেবে সে শেষ পর্যন্ত কলা-রুটি হাতে নেয়।
বাঁশ দিয়ে তৈরি বেঞ্চে বসে কলা-রুটি খায় মিলন কুমার। লোকটি গ্লাস ধুয়ে এক গ্লাস পানি পাশে রাখতে রাখতে বলল, “আস্তে আস্তে খাও। চিন্তার কিছু নেই। আমি দেখতিছি কি করা যায়।”

দূরে আলো দেখে লোকটি বলল, “এবার মনে হয় গাড়ি আসতেছে।”
সে পকেট থেকে বিশ টাকার একটা নোট মিলন কুমারের হাতে দিয়ে বলল, “এই বাসে রাজারহাট নামবা। ভাড়া পনের টাকা নেবে। তারপর ওখান থেকে বসুন্দিয়া যাবার অনেক গাড়ি পাবা।”
মিলন কুমার লোকটিকে কী বলে ধন্যবাদ দেবে বুঝতে পারে না। তার চোখ আনন্দে ছল ছল করে ওঠে। বোধকরি এর আগে কোনদিন এত ভাল লাগেনি তার। যে লোকটিকে কিছুক্ষণ আগেও সন্দেহ করেছিল আর সেই লোকটি কিনা তাকে এমন মহা বিপদ থেকে উদ্ধার করে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করছে? হাজার ধন্যবাদ দিয়েও এমন উপকারের ঋণ শোধ করা যাবে না।
মনের অবস্থা বুঝতে পেরে লোকটি বলল, “তোমার মা-বাপ হয়তো এতক্ষণ চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠেচে। সাবধানে যাও। আর হ্যা, কিছু কিছু ভুল আছে যা করতি হয় না।”
ঘরে ফেরার ব্যকুলতা নিয়ে মিলন কুমার যখন বাসে উঠে তখন ঘড়িতে তার রাত এগারোটা তিরিশ মিনিট।

6 thoughts on “ঘোর”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights